হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ২- ইমাম ও উমাইয়্যা খেলাফত
ইমাম গৃহে অবস্থান করুন অথবা সমাজের মধ্যে নেতা হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন করুন না কেন তার ইমামতের মর্যাদার ক্ষেত্রে কোন তফাৎ হয় না। কেননা ইমামত হচ্ছে রেসালতের অনুরূপ এমন একটি পদ,যা আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত। আর এটা মানুষের হাতে নয় যে তারা তাদের ইচ্ছা মত ইমাম নির্বাচন করবে।
স্বৈরাচারী ও সীমা লংঘনকারীরা সর্বদা ইমামদের মর্যাদার সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করত। যে কোন উপায়ে ক্ষমতা বা খেলাফতকে যা ইমামগণের বিশেষ অধিকার ছিল তা দখল করার জন্য চেষ্টা করত। আর এসব পাওয়ার আশায় এমন কোন অত্যাচার ছিলনা যে তারা করেনি। যে কোন ধরনের কাজ করতে তাদের কোন ভয়ও ছিলনা।
ইমাম বাকের (আ.)-এর ইমামতকাল ছিল অত্যাচারী উমাইয়্যা শাসক হিশাম বিন আবদুল মালেক এর সমকালীন যুগে। হিশাম ও অন্যান্য উমাইয়্যা শাসকরা ভাল করেই জানতো যে,যদিও অন্যায়ভাবে ও জোরপূর্বক এই ক্ষমতাকে হস্তগত করেছে,তথাপিও এই ক্ষমতা দিয়ে মানুষের অন্তর থেকে নবী (সা.)-এর পরিবারের প্রতি তাদের ভালবাসাকে ছিনিয়ে নেয়া যাবে না।
ইমামগণের আধ্যাত্মিক শান ও মর্যাদার পরিমাণ এত অধিক ছিল যে কারণে সব সময় তাঁর শত্রু ও অবৈধ ক্ষমতা হস্তগতকারীরা ভীতসন্ত্রস্ত থাকত। তাঁর সম্মানে উঠে দাঁড়াত। হিশাম কোন এক বছর হজ করতে যায়। ইমাম বাকের ও ইমাম সাদেকও ঐ বছর হজে গিয়েছিলেন। সে বারে ইমাম সাদেক (আ:)হজের ময়দানে খোৎবা দেন যা ছিল এরূপ :
‘আল্লাহর অশেষ কৃপা যে মুহাম্মদ (সা.)-কে সত্য দীন দিয়ে পাঠিয়েছেন। আর তার উসিলায় আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। সুতরাং আমরা আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে নির্বাচিত ব্যক্তি। আর দুনিয়াতে তার প্রতিনিধি। মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি তারাই যারা আমাদেরকে অনুসরণ করবে এবং দুর্ভাগা তারাই যারা আমাদের সাথে শত্রুতা করবে।’
ইমাম সাদেক (আ:)হজ থেকে ফেরার অনেক দিন পরে বললেন : আমার বক্তব্যকে হিশামের কাছে পৌঁছানো হয়েছিল। কিন্তু সে কোন প্রতিবাদ না করেই দামেস্কে ফিরে যায়। আমরাও মদীনায় ফিরে আসি। এসে জানতে পারলাম হিশাম তার মদীনার গভর্ণরকে এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছে যে,আমরা হজ থেকে ফিরে এলেই আমাদেরকে (আমাকে ও আমার পিতাকে) যেন দামেস্কে পাঠায়।
আমরা দামেস্কে গেলাম। হিশাম তিন দিন পর্যন্ত আমাদেরকে কোন পাত্তাই দিল না। চতুর্থ দিনে তার দরবারে গেলাম। হিশাম সিংহাসনে বসে ছিল এবং দরবারের লোকেরা তার সম্মুখে তীর নিক্ষেপের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল। হিশাম আমার বাবাকে তাঁর নাম ধরে ডেকে বলল : এসো তোমার বংশের সম্মানিত ব্যক্তিদের সাথে প্রতিযোগিতা কর।
আমার বাবা বললেন : আমার বয়স হয়েছে,তীর নিক্ষেপের প্রতিযোগিতা করার বয়সও চলে গেছে,আমাকে একাজ থেকে বিরত রাখ। হিশাম অনেক চাপাচাপি করল এবং এক প্রকার তাঁকে বাধ্যই করল এই কাজ করার জন্য। সে উমাইয়্যা বংশের এক বৃদ্ধকে তার তীর ধনুকটি বাবাকে দিতে বলল। বাবা ধনুকটি নিয়ে তাতে তীর লাগিয়ে লক্ষ্য বস্তুর দিকে ছুঁড়লেন। প্রথম তীরটি ঠিক লক্ষ্য বস্তুর মধ্যখানে গিয়ে বিদ্ধ হল। দ্বিতীয়টি প্রথমটির পশ্চাৎভাগে গিয়ে বিধলো এবং প্রথম তীরটিকে বিভক্ত করে ফেললো। তৃতীয়টি দ্বিতীয়টি,চতুর্থটি তৃতীয়টি,পঞ্চমটি চতুর্থটি,.... এভাবে নবমটি অষ্টমটির পশ্চাৎভাগে বিধলো,উপস্থিত সবাই চিৎকার ধ্বনি দিয়ে উঠলো। হিশাম হতভম্ব হয়ে চিৎকার দিয়ে বলল : সাবাস আবু জা’ফর! তুমি আরব ও অনারবদের মধ্যে তীর নিক্ষেপে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তুমি কেমন করে ভাবলে যে তোমার তীর নিক্ষেপের বয়স শেষ হয়ে গেছে? ... এ কথাগুলি যখন বলছিল ঠিক তখনই মনে মনে বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করল। মাথা নিচের দিকে দিয়ে চিন্তায় মগ্ন ছিল। আর আমরা তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রইলাম। আমরা অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। তার এ কাজের কারণে বাবা ভীষণ রেগে গেলেন। তিনি অতিরিক্ত রেগে যাওয়াতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু তার রাগান্বিত ভাবটি চেহারায় ফুটে উঠেছিল। হিশাম তার রাগান্বিত হওয়াটা বুঝতে পেরে আমাদেরকে তার সিংহাসনের দিকে যাওয়ার ইশারা করল। আমরা তার দিকে অগ্রসর হতেই সে নিজে উঠে দাঁড়িয়ে বাবাকে ধরে তার ডান পাশে অবস্থিত আসনে ও আমাকে বাবার ডান পাশে রাখা আরেকটি আসনে বসালো। তারপর সে আমার বাবার সাথে কথা বলতে শুরু করল : কুরাইশ বংশের গর্ব যে তোমার মত লোক তাদের মধ্যে আছে। সাবাস তোমাকে। এমন নিখুঁত তীর নিক্ষেপ কোথা থেকে এবং কত সময় ধরে শিখেছো?
বাবা বললেন : তুমি তো জানো যে মদীনাবাসীদের তীর নিক্ষেপে বিশেষ দক্ষতা আছে। আর আমি যুবক বয়সের কিছু সময় এটা শেখার কাজে লিপ্ত ছিলাম। পরে আর এটার চর্চা করিনি,যা আজ এতদিন পরে তুমি করতে বললে।
হিশাম : যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে এমন তীর নিক্ষেপ আর কখনও কোথাও দেখিনি। আমি মনে করি না যে এই পৃথিবীতে কেউ আর তোমার মত এভাবে তীর নিক্ষেপ করতে পারে। তোমার ছেলে জা’ফরও কি তোমার মতই তীর নিক্ষেপ করতে পারে?
বাবা বললেন : আমরা পূর্ণতার বিষয়সমূহ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। যে পরিপূর্ণতা ও সম্পূর্ণতাকে আল্লাহ্ তাঁর নবীকে দিয়েছিলেন,যেমন আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে বলেছেন :
) اَليَومَ اَكمَلتُ لَكُم دِينَكُم و اَتمَمتُ عَلَيكُم نِعمَتي و رَضيتُ لَكُم الاِسلامَ دِيناً(
“আজ তোমাদের দীনকে আমি সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম আর ইসলামকে তোমাদের মনোনীত দীন হিসাবে গ্রহণ করলাম।”১৩
আর যারা এ ধরনের কাজে পারদর্শী তাদের থেকে পৃথিবী কখনও দূরে থাকে না।
এই বাক্যগুলি শোনার সাথে সাথে হিশামের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। অতিরিক্ত রাগের কারণে তার চেহারা লাল হয়ে গেল। কিছু সময়ের জন্য মাথা নিচু করে থাকার পরে পুনরায় মাথা তুলে বলল : তবে কি তোমরা ও আমরা সম্মানিত ও অভিজাত একই বংশের (আবদে মানাফ) নই,তার সঙ্গে সম্পর্কের দিক দিয়ে আমরা একে অপরের সমান নই?
ইমাম : হ্যাঁ,কিন্তু আল্লাহ্ আমাদেরকে বিশেষত্ব দিয়েছেন যা অন্য কাউকে দেন নি।
জিজ্ঞেস করল : তাহলে কি আল্লাহ্ নবী (সা.)-কে আবদে মানাফ এর বংশে সকল মানুষের উদ্দেশ্যে পাঠায় নি? তুমি কিভাবে এই জ্ঞানকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছো নবী (সা.)-এর পর আর কোন নবী আসে নি আর তোমরা তো নবীও নও ?
ইমাম : আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে তার নবীকে বলেছেন :
) لاَ تُحَرِّك بِهِ لِسَانَكَ لِتَعجَلَ بِهِ(
-“(হে নবী!) তোমার জিহ্বাকে কিছু বলার জন্য নাড়িও না যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমার উপর ওহী নাজিল হয়। ১৪”
এই আয়াত অনুযায়ী নবী (সা.)-এর কথা ওহী বৈ অন্য কিছুই নয়। এ বিশেষত্ব আমাদেরকে দিয়েছেন যা অন্যদেরকে দেননি। আর এ কারণেই তিনি তার ভাই আলী (আ.)-এর সাথে গোপন সবকিছু বলতেন যা অন্য কাউকে কখনও বলতেন না। আল্লাহ্ এ ব্যাপারে বলছেন :
) وَ تَعِيَهَا اُذُنٌ واعِيَةُ(
-“আর অধিক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কান তা ধারণ করবে।১৫ ”
আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আলী (আ.)-কে বললেন : গোপন সকল বিষয় তোমাকে অবহিত করার জন্য আল্লাহর কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম তখন ঐ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় ও আমি আলীর জন্য এ প্রার্থনা করেছিলাম। আর সে কারণেই আলী বিন আবি তালিব (আ:)কুফায় বলেছিলেন : রাসূলুল্লাহ্ আমার জন্য এক হাজারটি জ্ঞানের দ্বার উন্মোচন করেছেন যার প্রতিটি দ্বার থেকে আবার হাজারটি দ্বার উন্মোচিত হয়... যেমনভাবে মহান আল্লাহ্ রাসূল (সা.)-কে বিশেষ পরিপূর্ণতা দিয়েছেন ও মনোনীত করেছেন তদ্রুপ রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কেও (তাঁর ইচ্ছায়) মনোনীত করেছিলেন এবং এমন কিছু শিখিয়েছেন যা অন্যরা শিখেনি। আর আমাদের জ্ঞান ঐ উৎস বা সূত্র থেকে এসেছে এবং শুধুমাত্র আমরাই উত্তরাধিকারী হিসাবে পেয়েছি না অন্যরা।
হিশাম : আলী ইলমে গায়েবের দাবিদার ছিল। কিন্তু আল্লাহ্ এখনও পর্যন্ত কাউকে ইলমে গায়েবের অধিকারী করেন নি।
বাবা : মহান আল্লাহ্ তার নবী (সা.)-এর উপর আসমানী কিতাব পাঠিয়েছেন। যার মধ্যে অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যৎ অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত কিছুর বর্ণনা করেছেন। কেননা পবিত্র কোরআনে আছে :
) وَ نَزَّلنَا عَلَيكَ الكِتَابَ تِبتاَناً لِكُلِّ شيءٍ(
তোমার কাছে এমন কিতাব (কোরআন) পাঠিয়েছি যা সব বিষয়ের ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা রাখে।১৬
এবং অন্য আরেক জায়গায় এসেছে যে,
) وَ نَكْتُبُ ماَ قَدَّمُوا وَ اَثَارَهُم وَ كُلَّ شَئْيٍ اَحْصَيْنَهُ في اِماَمٍ مُّبِيْنٍ(
এবং সমস্ত কিছুকে কিতাবে (কোরআনে) পরিস্কার ভাবে উল্লেখ করেছি।১৭
এবং অন্য আরেক জায়গায় এসেছে যে,
) ماَ فَرَّطْناَ في الْكِتَبِ مِنْ شَيءٍ (
... এমন কোন কিছু নেই যা এই কিতাবে (কোরআনে) আমরা আনয়ন করি নি।১৮
আর কোরআনের সমস্ত গোপন জ্ঞানকে আলী (আ.)-কে শিখানোর জন্য আল্লাহ্ তায়ালা নবী (সা.)-কে নির্দেশ দিয়েছেন। নবী (সা.) উম্মতের প্রতি বলেছেন : আলী তোমাদের সবার থেকে বিচার কার্যে পারদর্শী...। হিশাম নীরব রইল...। আর আমরা তার দরবার থেকে বেরিয়ে এলাম।১৯
বিরুদ্ধবাদীদের নিকট ইমামের যুক্তি প্রমাণ পেশ
আলী (আ.)-এর আবদুল্লাহ্ বিন নাফে নামক এক শত্রু ছিল। সে বলত যদি এই পৃথিবীর কেউ আমাকে বোঝাতে পারে যে খারেজীদেরকে হত্যা করে আলী সঠিক কাজ করেছে তবে আমি তার পক্ষে যাব। যদিও সে পৃথিবীর পূর্বে ও পশ্চিমে অবস্থান করে।
কেউ তাকে বলল : তুমি কি মনে কর যে আলী (আ.)-এর সন্তানরাও এটাকে প্রমাণ করতে পারবে না?
নাফে : তার সন্তানদের মধ্যে কি কেউ এমন মনীষী আছে যে আমাকে বোঝাতে পারে?
বলল : এটাই তোমার মুর্খতার একটা বড় পরিচয়। আর এটা কি সম্ভব যে আলী (আ.)-এর সম্ভ্রান্ত বংশে কোন মনীষী থাকবে না?
নাফে : এখন তার বংশের মনীষী কে?
ঐ ব্যক্তি তার কাছে ইমাম বাকের (আ.)-এর পরিচয় তুলে ধরল। সে তার সঙ্গী সাথিদের নিয়ে মদীনায় এসে ইমামের সাথে দেখা করার জন্য অনুমতি চাইল...।
ইমাম তার মালামালগুলিকে উটের পিঠ থেকে নিচে নামানোর জন্য এক ভৃত্যকে নির্দেশ দিলেন। আর তাকে পরের দিন ইমামের কাছে উপস্থিত হতে বললেন।
পরের দিন সকালে আবদুল্লাহ্ তার সাথিদের সহ ইমামের বৈঠক খানায় আসল। এদিকে তিনি নিজের সন্তানদের,মুহাজির ও আনসারদের উত্তরসূরীদেরকেও ঐ বৈঠকে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিলেন। যখন সবাই সেখানে জমা হলো। ইমামের গায়ে তখন লাল বর্ণের একটি পোশাক ছিল। ফলে তাঁকে দেখতে আকর্ষণীয় ও সুদর্শন লাগছিল। তিনি বললেন : মহান আল্লাহর অশেষ প্রশংসা। যিনি স্থান,কাল,পাত্র সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। প্রশংসা সেই আল্লাহ্ তায়ালার,যার না নিদ্রা আছে,না নিদ্রার ভাব। আর যা কিছু এই আসমান ও জমিনে আছে তিনি এ সব কিছুরই মালিক...। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি এই যে,আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) সৃষ্টির মধ্য হতে বাছাইকৃত তাঁর বান্দা ও রাসূল। কৃতজ্ঞতা মহান আল্লাহর যিনি তাঁকে নবুওয়াত দান করে আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। আর আলী (আ.)-কে তাঁর নবী (সা.)-এর খলিফা নিযুক্ত করে আমাদেরকে বিশিষ্ট করেছেন।
হে মুহাজির ও আনসারদের সন্তানেরা! তোমাদের মধ্য থেকে যে যতটুকুই আলী বিন আবি তালিবের মর্যাদা সম্বন্ধে জান বল। উপস্থিতদের মধ্য থেকে একজন আলী (আ.)-এর মর্যাদা ফজিলত বর্ণনা করতে করতে খাইবারের হাদীসে পৌঁছে,বলল : নবী (সা.) খাইবারের ইহুদীদের সাথে যুদ্ধের সময় বলেছিলেন :
(لَاُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَداً رَجُلاً يُحِبُ اللَّهَ وَ رَسُولَهُ وَ يُحِبُّهُ اللَّهُ وَ رَسُولُهُ,كَرَّاراً غَيْرَ فرَّار لاَ يَرْجِعُ حَتَّى يَفْتَحَ اللَّهُ عَلى يَدَيْهِ )
আগামীকাল ইসলামের পতাকা এমন একজনের হাতে দিব যে আল্লাহ্ ও তাঁর নবীকে ভালবাসে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর নবীও তাকে ভালবাসে। যুদ্ধ পারদর্শী যে কখনও যুদ্ধ থেকে পলায়ন করে না এবং আগামীকাল যুদ্ধ থেকে খালি হাতে ফিরে আসবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ্ তাঁর হাতে ইহুদীদের পরাজয় ঘটান।
পরের দিন ইসলামের পতাকাটিকে আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর হাতে দিলেন। তিনি যুদ্ধে বিস্ময় সৃষ্টি করে ইহুদীদেরকে পরাজিত ও পলায়নে বাধ্য করলেন। আর তাদের বৃহৎ দুর্গের দরজাকে খুলে ফেললেন।
ইমাম বাকের (আ:)আবদুল্লাহ্ বিন নাফেকে বললেন : এই হাদীসের ব্যাপারে তোমার ধারণা কি?
নাফে : হাদীসটি সত্য কিন্তু আলী পরে কাফের হয়ে গিয়েছিল এবং খারেজীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে।
ইমাম : তোমার জন্য তোমার মাকে ক্রন্দন করা উচিত। আল্লাহ্ যখন আলীকে ভালবাসতেন তখন তিনি কি জানতেন না যে সে খারেজীদেরকে হত্যা করবে? যদি বল আল্লাহ্ জানতেন না কাফের হয়ে যাবে।
নাফে : আল্লাহ্ জানতেন।
ইমাম : আল্লাহ্ তাঁকে কি তাঁর নির্দেশ মেনে চলার জন্য ভালবাসতেন নাকি তাঁর নির্দেশ অমান্য করে চলার কারণে?
নাফে : যেহেতু সে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলত সে কারণেই আল্লাহ্ তাকে ভালবাসতেন (অর্থাৎ যদি ভবিষ্যতে সে পাপী হয়ে যেত তাও আল্লাহ্ জানতেন এবং কখনও তাকে ভালবাসতেন না,সুতরাং এটা পরিষ্কার যে খারেজীদেরকে হত্যা করা আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যেই হয়েছিল)।
ইমাম : তুমি চলে যাও পরাজিত হয়েছো,কারণ এ ব্যাপারে তোমার কাছে কোন জবাব নেই। আবদুল্লাহ্ উঠে যাওয়ার সময় এই আয়াতটি তেলাওয়াত করল :
) حَتًّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْاَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْاَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ(
যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমাদের না তোমাদের কাছ থেকে সুবহে সাদেকের সাদা রেখা,কাল রেখা হতে পৃথক হয়ে যায়।২০
এ বিষয়টিকে রাতের অন্ধকার ঠেলে দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার দিকে ইশারা করে বলল : আল্লাহ্ই ভাল জানেন যে তাঁর রিসালতের দায়িত্ব কোন পরিবারের উপর ন্যস্ত করবেন।২১ ….(চলবে)